যারা ঈদুল ফিতরের দিন সকাল পর্যন্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী তথা যাকাতের উপযুক্ত সম্পদের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা তৎসম পরিমাণ অর্থের মালিক হন, তার জন্যে নিজের পক্ষ থেকে এবং তার অধীন পরিবারের সদস্যবৃন্দের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব তথা আবশ্যক।
তবে যাকাত এবং সদকাতুল ফিতরের মধ্যকার মৌলিক পার্থক্য হল, যাকাতের ক্ষেত্রে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকানা এক বছর পর্যন্ত অতিক্রম করা জরুরী। কিন্তু সদকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রে এই শর্ত প্রযোজ্য নয়, বরং ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই সদকাতুল ফিতর দেয়া আবশ্যক।
ইসলামে সদকাতুল ফিতর বিধিবদ্ধ হবার পেছনের কারণ দুটি। প্রথম কারণ হচ্ছে, মহান রবের দুয়ারে সদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে রোযাদারের রোযার ক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া ভুল-ত্রুটির মার্জনা লাভ। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, সমাজে আর্থিক অনটনে ভুক্ত মানুষের জন্যে ঈদের আনন্দ বিলিয়ে দিতে সহায়তা করা।
এই দুই উদ্দেশ্যের কথাই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস শরীফে ব্যক্ত হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন অনর্থক ও অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে রোযাদারের রোযা পরিশুদ্ধ করার জন্যে এবং অভাবী জনগোষ্ঠীর খাদ্যের ব্যবস্থাস্বরূপ। যে ব্যক্তি ঈদ জামাতের আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করবে, তার আদায়কৃত সদকাই ওয়াজিব সদকাতুল ফিতর হিসেবে গৃহীত হবে। আর যে ব্যক্তি ঈদ জামাতের পর আদায় করবে, তার আদায়কৃত এই সদকা অন্যান্য নফল সদকার মতই গণ্য হবে। (সুনানে আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ) সদকাতুল ফিতরের পরিমাণের ক্ষেত্রে হাদিসে বিভিন্ন পণ্যের উল্লেখ এসেছে।
সেসব পণ্যের মধ্যে কিছু পণ্য আছে, যা কম দামী। আবার কিছু বেশি দামের পণ্যও রয়েছে। আমাদের দেশে প্রতিবছর সেসব পণ্যের মূল্যমান অনুযায়ী একটা পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্ধারিত চার্ট অনুসরণ করলেই সহজ হয়। যারা সদকাতুল ফিতর দিবেন, তাদের সদকাতুল ফিতর দেয়ার ক্ষেত্রে নিজনিজ সামর্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখেই তা প্রদান করা উচিত; এটা ধর্মীয়ভাবে আবশ্যক না হলেও উত্তম এবং অধিকতর মানবিক। অর্থাৎ যার আর্থিক সামর্থ্য বেশি আছে, তিনি বেশি দামের পণ্য দিয়েই সদকাতুল ফিতর আদায় করবেন। যার সামর্থ্যে একটু কম, তিনি একটু কম দামের পণ্য দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে পারেন। এতে করে দরিদ্র মানুষের বেশি উপকার হয়। এ ব্যাপারটা শুধু মানবিকই নয়; বরং সদকাতুল ফিতর বিধিবদ্ধকরণের পেছনের উদ্দেশ্যের সাথেও অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ।
যিনি সদকাতুল ফিতর আদায় করবেন, তিনি চাইলে সদকার পুরোটাই একজনকে দিতে পারেন। চাইলে আলাদা আলাদা করে একাধিক ব্যক্তিকেও দিতে পারেন। তবে একজনকে পুরোটা দেয়া উত্তম। এক্ষেত্রে ঈদের জামাতের আগেই আদায় করাটা সুন্দর ও উত্তম। এতে করে অভাবী মানুষের ঘরে ঈদের দিনে ভালো কিছু রান্নার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়। যার ফলে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে ধনী-গরীব সবার মাঝে। সমাজের একটা শ্রেণী ঈদের আনন্দ উপভোগ করবে, আর দরিদ্র শ্রেণী সেই আনন্দের ছোঁয়াও পাবে না, এমনটা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চান নি। চাননি বলেই সামর্থ্যবান জনগোষ্ঠীর উপর সদকাতুল ফিতরের বিধান আবশ্যক করে দিয়েছেন।

