যাকাত বিষয়ক আপনার জিজ্ঞাসা
যাকাত زكاة এটি একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ পরিশুদ্ধকরণ, পরিবৃদ্ধিকরণ, প্রশংসা, যোগ্যতা ইত্যাদি।
কোন ব্যক্তি কর্তৃক কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে তাহার কোন নির্দিষ্ট মালের নির্ধারিত অংশের মালিকানা অর্পণ করাকে “যাকাত” বলে।
স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে কতিপয় শর্তসাপেক্ষে তার উপর যাকাত ফরজ হয়ে থাকে। যেমন: (ক) সম্পদের উপর পূর্ণ মালিকানা (খ) সম্পদ উৎপাদনক্ষম হওয়া (গ) নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা (ঘ) মৌলিক প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ থাকা (ঙ) ঋণমুক্ত হওয়া (চ) সম্পদ স্থিতি এক বছর পূর্ণ হওয়া।
(ক) ফকির বা দরিদ্র (যার সম্পদ নেই) (খ) মিসকীন বা নিঃস্ব (যার নিকট কিছুই নেই) (গ) যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী (যার অন্য জীবিকা নেই) (ঘ) ধর্মের দিকে যাদের চিত্তাকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য মুয়াল্লাফাতুল কুলুব (আর্থিক সংকটে থাকলে) (ঙ) ক্রীতদাসকে (দাসত্ব থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে) (চ) ঋণগ্রস্তকে (ঋণমুক্তির জন্য) (ছ) আল্লাহর পথে জেহাদে রত ব্যক্তি (যিনি জিহাদের সরঞ্জাম ক্রয় করতে অক্ষম) (জ) মুসাফির (স্বদেশে ধনী, কিন্তু বিদেশে ভ্রমণকালীন অভাবগ্রস্ত হলে)।
নিসাবের পরিমাণঃ কমপক্ষে সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা ঐ পরিমাণ সম্পদ কারো নিকট পূর্ণ এক বছর স্থিত থাকলে তার ওপরে যাকাত ফরজ হয়।
যাকাত দিতে হয় সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ২.৫ %
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও বাহনের (পশু ও গাড়ি) ওপর যাকাত ফরয নয়।
২য় হিজরীতে যাকাত ফরয হয়।
যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত ফরজ হয়। এ সম্পদগুলো হলো নগদ বা ব্যবসায় বিনিয়োগকৃত টাকা, স্বর্ণ, রৌপ্য, শস্য ও প্রাণী। যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের ওপর মালিকানা ও পূর্ণাঙ্গ দখল থাকতে হবে এবং সম্পদ ব্যবহারের নিরংকুশ ক্ষমতার অধিকারী হতে হবে, অন্যথায় যাকাত ফরজ হবে না।
যারা যাকাত আদায়ে উদাসীনতা দেখায় এবং কৃপণতা করে তাদের বিষয়ে কুরআনে করীমে কঠিন হুমকি এসেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আর যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) ‘এটা তা-ই যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর’’। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩৫, ৩৬]
নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ-রূপা হিজরি এক বছর পূর্ণ হলে যাকাত ফরয হবে তা যে উদ্দেশ্যেই সংগ্রহ করা হউক। কারণ যাকাত ফরয হওয়ার দলিল সব প্রকার স্বর্ণ-রূপাকে শামিল করে, কোন শর্ত যুক্ত করে কোন প্রকার স্বর্ণ-রূপা যাকাত থেকে বাদ দেওয়া হয়নি।
যাকাত শব্দটি পবিত্র কোরআনে আছে ৩২ বার, নামাজের সঙ্গে কোরআন মজিদে আছে ২৬ বার; স্বতন্ত্রভাবে কোরআনে আছে ৪ বার; পবিত্রতা অর্থে ২ বার। কোরআন মজিদে ১৯ টি সুরায় যাকাতের আলোচনা এসেছে।
১. নিশ্চয়ই সদকাহ্ (যাকাত) হলো-ফকীর, মিসকীন, তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্তাকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তিতে, ঋণ ভারাক্রান্তদের জন্য, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য।এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবাহ্ ৯:৬০)।
২. আমি যদি তাদেরকে পৃথিবীতে রাজত্ব দান করি, তাহলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখবে, আর সব কাজের চূড়ান্ত পরিণতি একান্তই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (সূরা হাজ্জ ২২: ৪১)।
৩. এটা (যাকাত) প্রাপ্য সেসব অভাবগ্রস্ত লোকদের, যারা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত থাকায় জীবীকার জন্যে জমিনে পদচারণা করতে পারে না এবং (আত্মসম্ভ্রমের কারণে) কারো নিকট হাত পাতে না বলে অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে।তোমরা তাদের (দারিদ্র্যের) লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে। তারা মানুষের নিকট মিনতি করে যাচনা করে না। আর যে কল্যাণকর কিছু তোমরা ব্যয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা সবশেষ অবহিত। (সূরা বাকারাহ ২:২৭৩)
৪. এবং তিনিই মাচাযু্ক্ত (কাণ্ডবিহীন) ও মাচাবিহীন (কাণ্ডবিশিষ্ট) বৃক্ষ-লতা সম্বলিত বাগানসমূহ, খেজুর গাছ, বিভিন্ন স্বাদের খাদ্য শস্য, যায়তুন ও আনার সৃষ্টি করেছেন- যেগুলো পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ ও সাদৃশ্যহীন। যখন তা ফলবান হয় তখন তোমরা তার ফল খাও এবং ফল সংগ্রহের দিনে তার হাক্ক (অর্থাৎ উশর) প্রদান কর এবং অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরা আনআম ৬:১৪১)
৫. সে সব লোক, যাদেরকে ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ, সলাত কায়িম এবং যাকাত প্রদান হতে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (সূরা নূর ২৪:৩৭)
১. হযরত হারিসাহ ইবনি ওয়াহব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী কারীম (দ.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা সদাকাহ (যাকাত) প্রদান কর, কেননা তোমাদের ওপর এমন যুগ আসবে যখন মানুষ আপন সদাকাহ নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু তা গ্রহণ করার মতো কাউকে পাবে না। (দাতা যাকে দেওয়ার ইচ্ছা করবে সে লোকটি বলবে, গতকাল পর্যন্ত নিয়ে আসলে আমি গ্রহণ করতাম। আজ আমার আর কোনো প্রয়োজন নেই। (সহীহ্ বুখারী: ১৪১১, সহীহ্ মুসলিম: ১০১১)
২. হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (দ.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছ থেকে ধন-সম্পদ পেয়েছে কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন ওই ধন-সম্পদ এমন বিষধর সাপে পরিণত হবে যার মাথার ওপর থাকবে দুটি কালো দাগ। এ সাপ সে ব্যক্তির গলায় পেচিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর সাপ উক্ত ব্যক্তির গলায় ঝুলে তার দুগালে কামড়াতে থাকবে এবং বলবে, আমি তোমার মাল, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ। (সহীহ্ বুখারী: ১৪০৩)
৩. হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (দ.) ইরশাদ করেন, প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ্! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। (সহীহ্ বুখারী: ১৪৪২, সহীহ্ মুসলিম: ১০১০)
৪. হযরত জারীর ইবনি আবদুল্লাহ্ (রাঃ). হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারিম (দ.) ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের নিকট যাকাত আদায়কারী আসবে, তখন সে যেন তোমাদের নিকট থেকে তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যায়। (সহীহ্ মুসলিম: ৯৮৯)
৫. হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবনি ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী কারীম (দ.) ইরশাদ করেন, যেসব জমিতে বৃষ্টি ও ঝরনার পানিতে সেচ হয়, অথবা যেসব জমিতে উপরিভাগ থেকে সেচ করা হয়, সেসব জমির ফসলে যাকাতের পরিমাণ এক দশমাংশ। আর যেসব জমিতে কূপ থেকে পানি সরবরাহ করা হয়, সেসব জমির ফসলের বিশ ভাগের একাংশ যাকাত (উশর) দিতে হবে। (সহীহ্। বুখারী: ১৪৮৩)
এসবের কোন যাকাত দিতে হবে না। তবে জমি থেকে উৎপাদিত ফসলের যাকাত দিতে হবে (বুখারী, মিশকাত হা/১৭৯৭)। শাক-সবজিতে কোন যাকাত নেই (তিরমিযী হা/৬৩৮; মিশকাত হা/১৮১৩)। বসবাসের জন্য নির্মিত বাড়িতে কোন যাকাত নেই। তবে বাড়ী বা দোকান থেকে প্রাপ্ত ভাড়া অথবা রিয়েল স্টেট ব্যবসার প্রাপ্ত লভ্যাংশ নিছাব পরিমাণ হ’লে এবং এক বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত দিতে হবে (আবুদাউদ হা/১৫৭৩; তিরমিযী হা/৬৩১)। গাছের কোন যাকাত নেই। তবে গাছ হতে উৎপন্ন শস্য নিছাব তথা পাঁচ ওয়াসাক্ব পরিমাণ হলে তাতে ২০ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে (বাক্বারাহ ২/২৬৭; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৭৯৪)। (উল্লেখ্য যে, ৫ ওয়াসাক্ব সমান ৬০ ছা‘ বা ৭৫০ কেজি।)
যাকাত ইসলামের প্রধান আর্থিক ইবাদাত। সাম্যের সমাজ গঠনের লক্ষ্যে এটি আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার মূলভিত্তি ও ইসলামের মূলস্তম্ভের একটি । ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদাত হল সালাত ও যাকাত। কুরআন মাজীদে বহু স্থানে সালাত ও যাকাতের আদেশ করা হয়েছে এবং আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য অশেষ সাওয়াব, রহমত ও মাগফিরাতের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধিরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন।” [সূরা বাকারা : ১১০]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, “তোমরা সালাত আদায় কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার।’’ [সূরা নূর : ৫৬]
কোন নর বা নারী কর্তৃক যাকাতের মাল তার দরিদ্র ভাই, বোন, চাচা, ফুপুসহ সকল দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনকে দিতে কোন আপত্তি নেই। যেহেতু এ সংক্রান্ত দলিলগুলো সাধারণ। বরং তাদেরকে যাকাত দেওয়া হলে সেটা সদকা ও আত্মীয়তার হক আদায় হবে। দলিল হচ্ছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “মিসকীনকে যাকাত দেওয়া সদকা। আর আত্মীয়কে দেওয়া সদকা ও আত্মীয়তার হক আদায়”।[মুসনাদে আহমাদ (১৫৭৯৪) ও সুনানে নাসাঈ (২৫৮২)]
মহান রাব্বুল আলামিন যাকাত ব্যয় বন্টনের ৮টি খাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যেমন—“যাকাত হল কেবল (ক) ফকির, (খ) মিসকীন, (গ) যাকাত আদায়কারী, (ঘ) যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তারা, (ঙ) দাস মুক্তির উদ্দেশ্যে, (চ) ঋণগ্রস্ত, (ছ) আল্লাহর পথে জিহাদ রত ব্যক্তি ও (জ) মুসাফিরদের জন্যে। এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান…” (সূরা তাওবা- ৬০)। এ খাতসমুহের বাইরে অন্য কোন খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না।
‘সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মহামারি আকার ধারণ করায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুল জনগোষ্ঠী কর্মহীন ও রোজগারহীন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এ সময় গরীব ও নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাদের কারও অবস্থা যদি উক্ত ৮ শ্রেণীর কোন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হন, তাহলে তাদেরকে যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে।
১৯। কোন কোন সম্পদের যাকাত দিতে হবে?
ছয় ধরনের সম্পদের যাকাত দিতে হবে-
১. স্বর্ণ
২. রূপা
৩.নগদ টাকা-পয়সা
৪.ব্যবসার মালামাল
৫. গবাদি পশু
৬. ফসল
২০০৩ সাল থেকে এ তহবিলের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীসহ ২ হাজার জনকে ৫ কোটি ৯৭ লক্ষ ৪৩ হাজার ৯ শত ৩৭ টাকা প্রদান করা হয়েছে। তন্মধ্যে দক্ষ নারী উন্নয়নে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৫৯টি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে ২০০০ জন নারীকে সেলাই কাজে প্রশিক্ষণ এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পের আওতায় ১০টি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপনের মাধ্যমে সমাজের অর্ধলক্ষ দরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে ওষুধসহ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। যা নিয়মিতভাবে চলমান আছে।
সরাসরি:
গাউসিয়া হক মনজিল (মাইজভাণ্ডার শরিফ) ও এস জেড এইচ এম ট্রাস্ট
(ডিউ উদয়ন ১৩ তলা),
বাস টার্মিনাল সংযােগ সড়ক,
চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম।
ব্যাংক একাউন্ট:
যাকাত ওয়েলফেয়ার ফান্ড
মুদারাবা এস এন ডি হিসাব নং- ৩০০৪-১৩১০০০০০৬৭৮
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিঃ
মুরাদপুর শাখা, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
বিকাশ:
০১৮৪১-০৮০৪৫৫ (পারসোনাল)
যাকাত ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রোকন। ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হল সালাত ও যাকাত। কুরআন মজীদে বহু স্থানে সালাত-যাকাতের আদেশ করা হয়েছে এবং আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য অশেষ ছওয়াব, রহমত ও মাগফিরাতের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধিরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ ؕ وَ مَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَیْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ۱۱۰
‘তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন। -সূরা বাকারা : ১১০
ইসলাম বিশ্বমানবতার জন্য চির কল্যাণকর এক পূর্ণাঙ্গ জীবনাদর্শ। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠায় সুখী, সমৃদ্ধশীল, ভারসাম্যপূর্ণ মানবিক জীবন গঠনই ইসলামের প্রতিশ্রুত বিষয়ের অন্তর্গত। ধনী-দরিদ্রের পর্বতসম পার্থক্য দূরীকরণ ও সমাজের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অক্ষুন্ন রাখার ক্ষেত্রে অনন্য এক নাম যাকাত। ধনী-দরিদ্রের সেতুবন্ধন তৈরিতে এ বিধান দিয়েছে ইসলাম। যাকাতের বিধান কার্যকর করে দরিদ্র ও নিঃস্ব শ্রেণির লোকদেরকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুণর্বাসিত করার এক ফলপ্রসূ ও বাস্তবধর্মী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ধনীদের সম্পদে অসহায় ও বঞ্চিতদের সুনির্দিষ্ট অধিকার নিশ্চিত করে যাকাত ব্যবস্থা আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে অভিনব অবদান রেখেছে।
যাকাত প্রদানে মানুষের মনে এক আল্লাহ তাআলার আদেশ পালন করার মাধ্যমে খোদাভীতি সৃষ্টি করে। আত্মা পবিত্র ও উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী করে। অপচয় রোধ করতে শেখায়। সর্বপরি যাকাত আত্মিক প্রশান্তি, নৈতিক উন্নতি, সম্পদের পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন-
“ আপনি তাদের ধন সম্পদ থেকে সাদাকা (যাকাত) গ্রহণ করুন। এর মাধ্যমে আপনি তাদের পবিত্র এবং পরিশোধিত করবেন (সুরা আত তাওবা-১০৩)”।
যাকাত আদায় করা ইসলামী শরীয়তের অকাট্য বিধান। যারা যাকাত আদায় করে না, তাদের ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে মারাত্মক হুশিয়ারি প্রদান করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন “আর যারা স্বর্ণ-রৌপ্য সঞ্চিত করে রাখে এবং তার (যাকাত-সদকার মাধ্যমে) আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে বেদনাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করে তাদের ললাটে, পৃষ্ঠে ও পাঁজরে দগ্ধীভূত করে দাগ দেয়া হবে এবং বলা হবে, স্বাদ গ্রহণ করো তোমাদের সঞ্চিত সম্পদের।” (সূরা তাওবা, ৯/৩৪-৩৫)।
যাকাত প্রদানের সময় গ্রহীতাকে যাকাতের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া জরুরি নয়। এক্ষেত্রে দাতার নিয়তই যথেষ্ট। অতএব, যাকাতের যোগ্য কেউ বখশিশ চাইলে তাকে না জানিয়ে যাকাতের টাকা প্রদান করলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু নিজ গৃহের কর্মচারী বা অধীনস্ত কর্মচারিদেরকে যাকাতের টাকা ঈদ বোনাস হিসাবে দেওয়া যাবে না। কারণ, সেগুলো তাদের পারিশ্রমিকেরই অংশবিশেষ। অবশ্য কর্মচারীকে তার নির্ধারিত বেতন ও বোনাস দেওয়ার পর গরিব হওয়ার কারণে যাকাত থেকে কিছু দিতে চাইলে তা জায়েয হবে। -আল বাহরুর রায়েক ২/২১২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৮
ভাই-বোন, ভাতিজা, ভাগনে, চাচা, মামা, ফুপু, খালা, শ্বশুড়-শাশুড়ী প্রমুখ আত্মীয় স্বজন গরীব অসহায় হলে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে। তবে নিজের পিতা-মাতা,দাদা-দাদী, নানা-নানী, প্রমুখ ঊর্ধ্বতন আত্মীয় স্বজন এবং ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি প্রমুখ অধস্তন আত্মীয়-স্বজন গরীব হলেও তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে না। তদ্রুপ স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দিতে পারবে না।
প্রকাশ থাকে যে, যাকাত গ্রহণ করতে পারে এমন আত্মীয়স্বজনকে যাকাত দিলে যাকাত দেওয়ার সওয়াবের পাশাপাশি আত্মিয়তার সম্পর্কের হক আদায়ের সাওয়াব হবে।
না, মসজিদ মাদরাসার নির্মাণ কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না; বরং যাকাত আদায় হওয়ার জন্য শর্ত হল, যাকাত গ্রহণের যোগ্য কাউকে যাকাতের টাকার পূর্ণ মালিক বানিয়ে দেওয়া।
কোনো ব্যক্তিকে প্রদত্ত যাকাত তার অন্তত একদিনের প্রয়োজন মেটানোর মতো পরিমাণের চেয়ে কম হতে পারবে না। তাছাড়া যাকাত এমনভাবে দেয়া উচিৎ, যাতে যাকাত গ্রহিতা যাকাতের অর্থ দিয়ে স্থায়ীভাবে দারিদ্রমুক্ত জীবন যাপন করতে পারে।
কোনো ব্যক্তিকে তার কৃত সেবার জন্য প্রতিদান স্বরূপ যাকাত প্রদান করা যায় না। কর্মচারীকে মজুরি হিসেবে: গৃহভৃত্য বা অন্য কোনো কর্মচারীকে মজুরি হিসেবে যাকাত দেওয়া যায় না। অবশ্য মজুরির অতিরিক্ত উপহার হিসেবে, এবং কোনো বিনিময় বা কৃতজ্ঞতাবোধের প্রত্যাশা ব্যতিরেকে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যায়।