বিশ্বব্যাপী জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রবণতা কমলেও বাংলাদেশের নারীদের ক্যান্সারের মধ্যে জরায়ু ক্যান্সার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গ্লোবোকন ২০২০-এর তথ্যমতে, প্রতিবছর ৮ হাজার ৬৮ জন নারীর জরায়ু ক্যান্সার শনাক্ত হয় এবং ৫ হাজার ২১৪ জনের মৃত্যু হয়। দেশের প্রায় ৫ কোটি ৪০ লাখ নারী জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকির মধ্যে আছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাল্যবিয়ে, কম বয়সে বাচ্চা নেওয়া, ২ বা ৩-এর অধিক বাচ্চা নেওয়া, ধূমপান ইত্যাদি জরায়ুমুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায় এবং চতুর্থ পর্যায়ে রেডিওথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে জরায়ু ক্যান্সারের অস্ত্রোপচারের জন্য আরও গাইনি অনকোলজি বিশেষজ্ঞ এবং রেডিওথেরাপির মেশিন প্রয়োজন। এই রোগ ক্যান্সার পূর্ববর্তী অবস্থায় শনাক্ত করতে পারলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশে ৮ হাজারের বেশি নারী জরায়ুমুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, যাদের মধ্যে প্রায় ৫ হাজার নারী মারা যায়। নারীদের ক্যান্সারের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের পরেই জরায়ুমুখের ক্যান্সারের অবস্থান। এটা আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএআরসির হিসাব। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবন্ধন প্রতিবেদন অনুযায়ী, নারীদের দ্বিতীয় প্রধান ক্যান্সার এটি।
জানা যায়, বাল্যবিয়ে যেমন জরায়ুমুখের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ, তেমনি দেরিতে বিয়েও এই রোগের একটি কারণ। তবে দ্রুত চিহ্নিত করাই জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায়। জরায়ুমুখের ক্যান্সার ঝুঁকিরোধে মেয়েদের যাতে ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যেই বিয়ে হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। এ ছাড়া এটি প্রতিরোধে ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, জানুয়ারি মাসজুড়ে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতা মাস। বাংলাদেশ ২০১৮ সাল থেকে জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় শনিবার জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতা দিবস পালন করে আসছে। গতকাল শনিবার ষষ্ঠবারের মতো পালিত হয়েছে জরায়ুমুখের ক্যান্সার সচেতনতা দিবস-২০২৪।
গাইনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ারা বেগম বলেন, জরায়ুমুখ ক্যান্সার সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা যায়। ক্যান্সার শনাক্তকরণ পরীক্ষার মাধ্যমে যেহেতু আমাদের দেশে জরায়ুমুখ ক্যান্সার দ্বিতীয় অবস্থানে আছে, তাই এটি শনাক্তকরণের জন্য ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে সচেতন করতে হবে। ভায়া পরীক্ষা করার মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়, বিষয়টি জানাতে হবে। মনোয়ারা বেগম বলেন, ভায়া ছাড়াও এইচপিভি ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এই ক্যান্সার চিহ্নিত করা যায়। জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে ৯-১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের এইচপিভি টিকা দিতে হবে এবং বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে।

