গ্রামের শত শত নারী সুঁই-সুতায় স্বাবলম্বী

(ছবি) পটিয়া থানার অন্তর্গত খড়না ইউনিয়নের বাসিন্দা আইয়ুব মুসার স্ত্রী আয়শা আক্তার। দারিদ্রতার কারণে দুঃখ-কষ্টের সংসার ছিল তার। তবে সেই কষ্ট এখন অনেকটা লাঘব হয়েছে। শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট থেকে পাওয়া সেলাই মেশিন দিয়ে তিনি এখন নিয়মিত উপার্জন করে চলেছে। এই টাকা দিয়েই তার দুই মেয়ের পড়ালেখার খরচ যোগানোর পাশাপাশি স্বামীকেও সাংসারিক কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন আয়শা।

তিনি জানান, তিনি পটিয়া উপজেলার চক্রশালা ২নম্বর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সদস্য। এই কেন্দ্র থেকে তিনি সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে ট্রাস্টের পক্ষ থেকেই বিনামূল্যে একটি সেলাই মেশিন পেয়েছেন। এলাকার নারীদের কাছ থেকে কাপড় সেলাইয়ের অর্ডার নিয়ে এই মেশিন দিয়েই সেলাই করে এখন উপার্জন করছেন তিনি। এই টাকা দিয়েই চলছে তার দুই মেয়ের পড়ালেখার খরচ। পাশাপাশি তিনি তার স্বামীকেও সাংসারিক কাজে আর্থিকভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছেন। তাকে এভাবে স্বাবলম্বি করে তোলার জন্য তিনি শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট’র প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

শুধু আয়শা আক্তারই নয়, দেশের শত শত নারীদের স্বাবলম্বী করতে কাজ করে যাচ্ছে শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী ট্রাস্ট। ট্রাস্টের “দক্ষ নারী উন্নয়ন প্রকল্প” এর আওতায় বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (পাইলট প্রকল্প-২) এর অধীনে দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প পরিচালনা পর্ষদ’ ব্যবস্থাপনায় দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বি করতে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল-সহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ৫৯টি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে দরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং প্রশিক্ষণ শেষে তাদের মাঝে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। আর এই মেশিন দিয়েই সেলাই কাজ করে হাজার হাজার নারী স্বাবলম্বি হয়েছেন। এমনকি তারা নিজেরাও গ্রাম পর্যায়ে অন্য নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বি করে তুলছেন।

জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী ট্রাস্ট সুত্রে জানা যায়, সারাদেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাদের ৫৯টি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে দরিদ্র নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের মাঝে সেলাই মেশিনও দেওয়া হচ্ছে। এই শাখাগুলো হলো-চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ইয়াছিন নগর শাখা, চিকদাইর ইউনিয়ন শাখা-২, ফটিকছড়ি আজিমপুর শাখা, শে^তকুয়া শাখা, পশ্চিম সুন্দরপুর শাখা, কাঞ্চনপুর শাখা, ছাদেক নগর শাখা, বি-বাড়িয়া জেলার সরাইল অরুয়াইল এলাকার পরমানন্দপুর উত্তর শাখা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া উমানাতপুর শাখা, চট্টগ্রামের হামজারবাগ এলাকার গাউসিয়া হকভা-ারী খানকাহ্ শরীফ শাখা, হবিগঞ্জের মাধবপুর বেজোড়া শাখা, হবিগঞ্জ সদরের হাতিয়ার খান শাখা, একই এলাকার সুলতান সি শাখা, হকভা-ারী দায়রা শরীফ শাখা, বড়হাট মৌলভী বাজার পৌর শাখা, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী ইউনুছ মার্কেট শাখা, কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আগানগর গকুলনগর শাখা, একই উপজেলার শিমুলকান্দি এলাকার গোছামারা শাখা, শিমুলকান্দি ছাগাইয়া ৭নং ওয়ার্ড শাখা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকার শিমুলকান্দি ধানতুলিয়া দক্ষিণপাড়া শাখা, অরুয়াইল এলাকার পাকশিমুল উত্তর শাখা।

ট্রাস্টের দারিদ্র বিমোচন পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম আল মাসুদ বলেন, চলমান ৫৯টি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা দুই হাজারও বেশি। যেখানে ইতিমধ্যেই এ প্রকল্পে সর্বমোট খরচ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা। দরিদ্র নারীদের আরও ব্যাপক আকারে স্বাবলম্বি করতে এই প্রকল্পে বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, আরো একশ টি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মাঝে আরও বেশি আকারে সেলাই মেশিন বিতরণ, সব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিধাব ও প্রতিবন্ধী নারীদের পুনর্বাসন করা, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সম্মানজন জীবন-যাপনের দিকে এগিয়ে নিতে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে পরিবারে অন্তত একজনকে আয় সক্ষম দক্ষ ব্যক্তিতে পরিণত করা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

ট্রাস্টের দারিদ্র বিমোচন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি লায়ন আলহাজ¦ দিদারুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট একটি ত্বরিকতের সংগঠন। এই সংগঠন মানুষকে আলোর পথে, নবীর পথে, রাসূলের (দ.) পথে সর্বোপরী আল্লাহর পথে আসার আহবান জানানোর পাশাপাশি স্বনির্ভরতা অর্জনে এই ট্রাস্টের মাধ্যমে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বার্ষিক অনুদান দেওয়া হয় এই ট্রাস্টের মাধ্যমে। ট্রাস্টের মাধ্যমে চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করে দরিদ্র নারী, শিশু সহ বিভিন্ন বয়সীদের বিনামূল্যে ঔষধ-সহ চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। যে সমস্ত মহিলারা যাদের কোন কর্মসংস্থান নেই, তাদেরকে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন দিয়ে স্বাবলম্বি করা হচ্ছে। এককালীন অর্থ দিয়ে তাদের কন্যাকে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাই আমি মনে করি এটি একটি সফল সংগঠন।

বি-বাড়িয়া জেলার সরাইল থানার অরুয়াইল এলাকার পাকশিমুল গ্রামের উত্তর শাখা থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ওই এলাকার উজ্জ্বল মিয়ার স্ত্রী রুমা বেগম বলেন, সংসারে দারিদ্রতার কারণে খুব কষ্টে দিন কাটছিল আমাদের। আমাদের দারিদ্রতার কথা জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী ট্রাস্টের লোকজন জানার পর গ্রামের অন্যান্য নারীদের মতো আমাকেও তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষার্থী হিসেবে মনোনীত করে। সেখানে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি সেলাই মেশিনও পেয়েছি। এই সেলাই মেশিন দিয়ে কাজ করে এখন আমার সংসারে অনেকটা দারিদ্রতা দূর হয়েছে। আমি নিজেও এখন গ্রামের মেয়েদের কাজ শিখিয়ে বাড়তি উপার্জন করছি। আমার নিজের কেন্দ্রেও এখন ১০ জন নারী কাজ শিখছে।
পটিয়া পৌরসভার হারুন রশিদ বলেন, ’২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ার যে স্বপ্ন দেখছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি মনে করি হযরত জিয়াউল হক মাইজভা-ারী ট্রাস্ট’র মতো অন্যান্য সংগঠনগুলোও যদি এভাবে সাধারণ মানুষকে স্বাবলম্বি করতে এগিয়ে আসে তবে সেই লক্ষ্য পূরণ অনেকটা সহজ হবে।

সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট পরিচালিত দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম সম্পর্কে চট্টগ্রাম ৮ আসনের সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদ বলেন, দেশের দুস্থ, এতিম, বয়স্ক, বিধবা, বিপন্ন শিশু, প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তামূলক বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলছে ‘শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট’। অসহায় কর্মোদ্যমী ব্যক্তির কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা-চিকিৎসা-বিবাহ ও গৃহ নির্মাণ খাতে আপতকালীন সহায়তা প্রদানে, দারিদ্র্য বিমোচন ও মানব সম্পদ উন্নয়নে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করে মানবতার বাতিঘরে পরিণত হয়েছে এ ট্রাস্ট। ঝড়েপড়া শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো, গৃহনির্মাণে সহায়তা, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাসামগ্রী প্রদান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বাবলম্বী করা ইত্যাদি সমাজসেবামূলক কাজ অন্যদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

আরো দেখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিজিটাল যাকাত বাক্স

আর্তমানবতার সেবায় আপনার যাকাত প্রদান করতে বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়সহ যে কোনো ব্যাংকিং অ্যাপ থেকে স্ক্যান করুন।