সফলতার গল্প
যাকাত ফান্ডের সহায়তায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে অনেক ব্যক্তি ও পরিবার। এখানে এ ধরনের অল্প কয়েকটি কেস স্টাডি উপস্থাপন করা হলো

চোখের আলো নেই বলে থেমে থাকে না জীবন
চোখের আলো নেই বলে থেমে থাকে না জীবন। জ্ঞানের আলো যদি থাকে অফুরন্ত আর জ্ঞানের ভাণ্ডার যদি থাকে সমৃদ্ধ তাহলে দৃষ্টিহীনতা কোনো বাঁধা হতে পারে না। প্রজ্ঞার শক্তি পৃথিবীর সবকিছুকে জয় করতে পারে তা-ই দেখিয়ে যাচ্ছে জ্ঞানেরপিয়াসী অদম্য দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে জ্ঞান, বুদ্ধি, তীক্ষ্মতা রয়েছে তা অনেক অপ্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যেও নেই। সব সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে সরকারের পাশাপাশি শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দৃষ্টিহীনদের মাঝে আলো ছড়াচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, মুরাদপুর সরকারী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, ইসলামিয়া কলেজ, হাজেরা তজু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও হামজারবাগ রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়-এ পাঠ্যরত প্রায় ৯৬জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮, ৩,০০০ ( আট লক্ষ তিন হাজার) টাকার শিক্ষা সামগ্রী ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে।
দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প যাকাত তহবিল পরিচালনা পর্ষদ মনে করেন-প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, শারীরিক বা যেকোনো প্রতিবন্ধীতা অক্ষমতা নয়, বরং ভিন্ন ধরনের সক্ষমতা। তাদের মধ্যে রয়েছে আল্লাহ্ প্রদত্ত তীক্ষ্ণ মেধাসম্পন্ন অনন্য প্রতিভা। তাঁরা স্ব স্ব অবস্থানে প্রতিভাবান। সুযোগ পেলে প্রতিবন্ধীরাও দক্ষতা ও পারদর্শিতার মাধ্যমে অনেক কিছু করতে পারে। প্রতিবন্ধীদের মেধা ও প্রতিভাকে কাজে লাগাতে পারলে এরা মানবসম্পদে পরিণত হবে।
মানবাধিকার, উপযুক্ত পরিচর্যা, অনুকূল পরিবেশ, আর্থিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সমবেদনা পেলে তারা দেশ ও জাতি গঠনে যোগ্য অংশীদার হতে পারে।
আসুন, আমরা প্রতিবন্ধীদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সহমর্মিতা প্রকাশে অত্যন্ত যত্নবান হই এবং তাদের মানবাধিকার সুরক্ষার ব্যাপারে সচেতন হই!

ভাত-কাপড়ের অভাব নাই, মেয়েরা এখন স্কুলে যায়
শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট পরিচালিত দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প -এর উদ্যোগে বেকার , পুঁজিহীন, কর্মক্ষম উদ্যোগী ব্যক্তির আর্থিক অবস্থা উত্তরণে সহায়তা প্রদান কর্মসুচির অংশ হিসাবে- মোহাম্মদ ফারুক ( পিতাঃ মৃত জয়নাল আবেদিন, কেরানি বাড়ী, ফতেয়াবাদ, চিকনদন্ডি, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম)’কে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
কথা হয় সহায়তা গ্রহণকারী মোহাম্মদ ফারুকের সাথে। তিনি বলেন, পেশায় আমি ছিলাম একজন দিনমজুর। দুই মেয়ে- দুই ছেলে, স্ত্রী ও মা’ক নিয়ে ছয় জনের সংসার। পরিবারে আমিই উপার্জনকারী একমাত্র ব্যক্তি। কাজ পেলে খায়, না হলে উপুষ থাকতে হয়। কান্না বিজড়িত কন্ঠে ফারুক বলেন, ঈদ আসলে পাড়ার ছোট ছোট শিশু- কিশোর নতুন জামা-কাপড় পড়ত, আমার সন্তানেরা বলত, বাবা আমাদের নতুন জামা কখন আসবে, কখন নতুন জামা পড়ব? সন্তানদের এই প্রশ্নের কোন উত্তর আমার জানা ছিল না। তাদের সব প্রশ্নের উত্তর চোখের পানি হয়ে নেমে আসত।
সহজ সরল ফারুক ভাণ্ডারীর পাগল, মাইজভাণ্ডার গাউসিয়া হক মন্জিলে হযরত জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী’র দরবারে যান। তিনি জানান, ২০১৮ সালের শেষের দিকে আমার এই দুর্বিসহ জীবনের কথা লিখিতভাবে মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ, চৌধুরী হাট ঠান্ডাছড়ি শাখার মাধ্যমে শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট অফিসে প্রেরণ করি। ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ আমাকে ৪০,০০০ টাকা সহায়তা হিসাবে প্রদান করেন এবং বলেন এই টাকা ফেরত দিতে হবে না তবে কাজে লাগাতে হবে। জীবনে কখনো এত টাকা একসাথে হাতে নিয়েছি বলে মনে হয় না। সব হাজারী নোট।
সহায়তার টাকায় একটা রিকশা ক্রয় করি। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫০০ টাকা আয় করি। সংসারের খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক ২০০ টাকা সঞ্চয় করে পূর্বে সব ঋণ পরিশোধ করি। বর্তমানে ভাত কাপড়ের অভাব নাই, মেয়েরা এখন স্কুলে যায়।

“মেয়েটারে ডাক্তার বনাইতে চাই”
মোহাম্মদ আবদুর জব্বার-এর বড় ছেলে মোহাম্মদ শাহাজাহান, মা-মনোয়ারা বেগম, গ্রামঃ হারং, মাষ্টার বাড়ী, চান্দিনা পৌরসভা, কুমিল্লা। মা-বাবা, দুই বোন, দুই মেয়ে-এক ছেলে, স্ত্রী সহ নয় জনের সংসার। সংসারে বড় ছেলে তাই দায়িত্বও অনেক। পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্জন সক্ষম ব্যক্তি। শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট পরিচালিত দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের সহায়তায় তিনি এখন স্বাবলম্বী।
এ প্রতিবেদকের কথা হয় শাহাজাহানের সাথে, তিনি বলেন,বড় মেয়েটা সুলতানা আকতার লেখা-পড়া করার খুবই আগ্রহ। স্কুলের মাষ্টার কইছে তাঁর স্মরণশক্তি ভালা। যেখানে দু’বেলা খাওয়ন জুটেনা সেখানে মেয়েটারে কেমনে স্কুলে পাঠাই বলেন! আমার নিদিষ্ট কোন কাজ নাই । যখন যা পাই করি, কোন রকম খাইতে পারলে হয় এর বাহিরে বেশি কিছু চিন্তা করার সুযোগ- সার্মথ্য যে আমার নাই। দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে মনের গভীর থেকে বলেন-সবই আল্লাহর ইচ্ছা। কিন্ত শাহাজাহনের মেয়ে এখন লেখা- পড়া করে, ঘরেও কোন অভাব নাই।
তিনি জানান, গত বছরের প্রথম দিকে আমার অভাব- অনটনের কথা শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট পরিচালিত দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প কর্মকর্তাদের লিখিত ভাবে জানালে ওনারা আমাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা সহায়তা হিসাবে দেয়। সহায়তার এই টাকা দিয়া ব্যাটারি চালিত একটা ভ্যান গাড়ি ক্রয় করি। ভ্যান গাড়ি চালাইয়া প্রতিমাসে ১০/১২ হাজার টাকা রোজগার করি। শাহাজাহান বলেন, আমার মেয়েটারে হারং উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করাইছি। খুবই উচ্ছসিত হয়ে বলেন,“ মেয়েটারে ডাক্তার বনাইতে চাই”। শাহাজাহান মুচকি হাসি দিয়ে বলেন, আল্লাহ্ রহমতে আগের চেয়ে অনেক ভাল আছি।

খালেদা এখন নিজেই রোজগার করেন…
দুই মেয়ের জননী খালেদা ইয়াসমিন (স্বামী: মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ৬ নং খিতাপচর ওয়ার্ড, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম)। স্বনির্ভরতা অর্জনে খালেদা ইয়াসমিন এর চাহিদা অনুসারে শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট পরিচালিত দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প এর ব্যবস্থাপনায় ২০১৮ সালে একটি সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়েছিল।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১ খ্রীস্টাব্দে সরেজমিনে খালেদার বাড়ীতে গিয়ে তাঁর সাথে কথা বলে জানতে পারি- তিনি এলাকার মহিলাদের সেলাই কাজে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দোকানীর অর্ডারের কাজ করে প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা আায় করেন। স্বামীর রোজগারের সাথে নিজের আয় যোগ করে স্বাচ্ছন্দে পরিবারের খরচ চালাচ্ছে এবং মেয়েদেরকেও স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন বলে খালেদা জানান। এভাবে দেশের হাজারো খালেদাকে স্বনির্ভর করে মুখে হাসি ফোটাতে অবিরত কাজ করে চলছে শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক:) ট্রাস্ট।

শামসুল আলম বলেন-শোকর আলহামদুলিল্লাহ্
দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে দিগন্ত বিস্তৃত আকাশের দিকে দু হাত প্রসারিত করে শামসুল আলম বলেন-শোকর আলহামদুলিল্লাহ্ । দুই ছেলের জনক মোহাম্মদ শামসুল আলম (পিতা: মৃত আবুল কাসেম, আশরাফ নগর,কমলা টিলা,কদলপুর, ০৯ নং ওয়ার্ড, রাউজান,চট্টগ্রাম)। স্বনির্ভরতা অর্জনে শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট পরিচালিত দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প হতে ২০১৮ সালে তাঁকে একটি কলের লাঙ্গল প্রদান করা হয়েছিল।
ট্রাস্ট থেকে কলের লাঙ্গলটি পাওয়ার পর জীবনমানের কী পরিবর্তন হয়েছে শামসুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি পেশায় একজন কৃষক ও সিএনজি চালিত ট্যাক্সির ড্রাইভার। ভাড়ায় গাড়ী চালাতাম। সারাদিন গাড়ী চালিয়ে যা আয় হত তার বেশীরভাগ মালিককে দিয়ে দিতে হতো, বাকী যা থাকতো তা দিয়ে সংসারের খরচ চালাতে মাসের শেষে কর্জ করতে হতো। নিজে একটি গাড়ী কিনব-সেই রকম টাকা-পয়সাও ছিল না। আমি মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ, কদলপুর শাখার (রাউজান) একজন সদস্য হিসাবে আমার অবস্থার কথা জানিয়ে কমিটির মাধ্যমে ট্রাস্ট বরাবর আবেদন করি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমার সাথে সরাসরি কথা বলেন এবং একটি কলের লাঙ্গল ক্রয় করে দেন।
দু’বছর কলের লাঙ্গলটি চালিয়েছি, প্রতি মৌসুমে খরচবাদ দিয়ে ৫০ হাজার টাকা রোজগার করেছি। নিজেও চাষাবাদ করি। কিছু কর্জ ছিল যা ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছি। বর্তমানে এক বছরের ধান মজুদ আছে। পরিবারে তেমন একটা অভাব নাই। সবচেয়ে খুশি কথা, আমার বড় ছেলে কিছু দিনের মধ্যে হাফেজ হয়ে বের হবে। ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। বর্তমান অবস্থায় আপনি কি সুখি, প্রশ্ন করা হলে- শামসুল আলম দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে দিগন্ত বিস্তৃত আকাশের দিকে দু হাত প্রসারিত করে বলেন- শোকর আলহামদুলিল্লাহ্।

হাওরের সামছু এখন সাবলম্বী
সামছুল আলম (পিতাঃ মৃত জামির হোসেন, ধানতুলিয়া , নাছির নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) হাওর এলাকার বাসিন্দা। ভিটে মাটি ছাড়া নিজের কোন জায়গা-জমি নাই তার। চার মেয়ে-স্ত্রী, মাকে নিয়ে ৬ জনের সংসার।
হাওর মানে দিগন্ত বিস্তৃত জলাভুমি। বর্ষায় পানি আর পানি। শুকনোকালে মাঠের পর মাঠ । অন্যের জমিতে কামলা খেটে, আইক্রিম বিক্রি করে, নৌকায় মানুষ পার করে সংসার চালায় সামছুল আলম ।
বছরের অর্ধেক সময়ে বোরো মৌসুমে বীজতলা তৈরী করা, বৈশাখ মাসে গেরস্তবাড়িতে ধান ভানা থেকে শুরু করে গোলায় ধান ভরা পর্যন্ত সব কাজই করে সামছু। সারাদিনে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করে যা পায় তা দিয়ে সংসার চলে না , অভাব লেগেই থাকে।
কিভাবে সাবলম্বী হলেন জানতে চাইলে সামছুল আলম বলেন, বি-বাড়িয়ার মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ এর সাংগঠনিক সমন্বয়কারী কিবরিয়া ভাইকে আমার পরিবারের অভাব অনটনের কথা জানালে তিনি আমাদের মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি ধানতুলিয়া শাখার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তার জন্য শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট বরাবর আবেদন করেন। আমার আবেদনটি ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করে আমাকে ডেকে এনে ২৬,০০০/- (ছাব্বিশ হাজার) টাকা সহায়তা হিসাবে প্রদান করেন এবং বলেন এই টাকা ফেরত দিতে হবে না তবে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে।
আমি বাড়ী গিয়ে এই টাকা দিয়ে একটি ধান মাড়াই মেশিন ক্রয় করি। ধন মাড়াই মেশিনের মাধ্যমে এককানি ধান মাড়াই করে ৮শ টাকা পাই। এছাড়া টাকার পরিবর্তে অনেকেই দুই বস্তা ধান দেন। এভাবে আমি আস্তে আস্তে সাবলম্বী হতে থাকি। ধান মৌসুমের বাইরে মেশিনটি নৌকার সাথে যুক্ত করে অটৈয়ারা বাজার ঘাট দিয়ে নৌকায় লোক পারাপার করে আয় করি। এতে আমি ভালভাবে সাবলম্বী হয়ে উঠি। দু’বছর আগে যেই জমির পাশে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতাম হযরত জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট এর সহায়তায় সেই জমিতে কাজ করে শেষ করতে পারি না। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে-শান্তিতে আছি। আল্লাহ্ আমাকে যা দিচ্ছে তা দিয়ে ভাল ভাবে জীবন যাপন করছি।

রোগী কল্যাণ সমিতিকে দুস্থ রোগীদের চিকিৎসা সহায়তায় একলক্ষ টাকার চেক প্রদান
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতিকে দুস্থ রোগীদের চিকিৎসা সহায়তায় একলক্ষ টাকার নগদ চেক প্রদান করা হয়।
চেক গ্রহণ কালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. জালাল উদ্দীন বলেন, হতদরিদ্র মানুষদের রিক্শা প্রদান, কৃষি উপাদান হিসেবে ট্রাক্টর ও সেচ পাম্প প্রদান, দুস্থ নারীদের সেলাই মেশিন, বিদেশ গমনে সহায়তা, কর্জ পরিশোধে সহায়তা, পঙ্গুদের জন্য হুইল চেয়ার প্রদান, প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা সহায়তা প্রদান, বিবাহ সহায়তা, দূরারোগ্য রোগীদের চিকিৎসা ব্যয়ে সহায়তা, এমনকি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত হত দরিদ্র রোগীদের ঔষধপত্র এবং চিকিৎসা সরঞ্জমাদি কেনার জন্য রোগীকল্যাণ সমিতিকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্ট এর দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প যাকাত তহবিল ব্যাপকভাবে কাজ করে চলেছে। তাদের ব্যাপক কর্মকান্ড অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার এবং এ ধরণের সমাজ হিতৈষী ও মানবতাবাদী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের জন্য অতিব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এককভাবে দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব নয়। এ জন্য আমাদের সমাজের ধনী ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুসরণযোগ্য।

দিনমজুর থেকে দোকানের মালিক
শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট পরিচালিত দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প -এর উদ্যোগে বেকার , পুঁজিহীন, কর্মক্ষম উদ্যোগী ব্যক্তির আর্থিক অবস্থা উত্তরণে সহায়তা প্রদান কর্মসুচির অংশ হিসাবে- মোহাম্মদ দুলাল মিয়া ( পিতাঃ মোহাম্মদ আনোয়ার আলী, মাতাঃ রাবেয়া আক্তার, দক্ষিণ সুলতান সি. হবিগঞ্জ)’ কে দোকানের পূঁজি সহায়তা প্রদান করা হয়।
কথা হয় সহায়তা গ্রহণকারী দুলাল মিয়া’র সাথে। তিনি বলেন, পেশায় আমি ছিলাম একজন দিনমজুর। চার মেয়ে- এক ছেলে, স্ত্রী, মা-বাবা নিয়ে নয় জনের সংসার। অসুস্থ মা’য়ের চিকিৎসা খরচ, পরিবারের জন্য একটা ভাল কাপড় ক্রয় করে দেওয়া সবকিছু ছিল সাধ্যের বাহিরে।
আমার এই দুর্বিসহ জীবনের কথা লিখিত ভাবে মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ, সুলতান সি শাখার মাধ্যমে শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট অফিসে প্রেরণ করি। ট্রাস্ট কতৃপক্ষ আমাকে ৪০,০০০ টাকা সহায়তা হিসাবে প্রদান করেন।
সহায়তার টাকা পেয়ে হবিগঞ্জে গিয়ে ভ্রাম্যমান খাবারের দোকান খুলি। দোকানে ফুচকা, জাল নাস্তা ও বিরাণী বিক্রি শুরু করি। ছয় মাসের মধ্যে আরো একটা দোকান দিই। খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক ১৫০০ টাকা আমার রোজগার হয়। আল্লাহর রহমতে আমি এখন দু’টি দোকানের মালিক।

জীবনমানের সময় নিদান যেন শান্ত পরিশীলিত।
কথা হয় এখলাছ মিয়ার সাথে। চন্দনাইশ বৈলতলী ইউনুস মার্কেট এলাকার মোহাম্মদ হাকিম আলীর পুত্র।
তিনি বলেন, আগে রিক্সা চালাতাম। পরিশ্রম বেশী আয় কম। তাই কর্জের মধ্যে সংসার জীবন অতিবাহিত হতো। অনেক ধার দেনায় জীবন অশান্ত। দারিদ্র বিমোচন প্রকল্প যাকাত তহবিল থেকে অনুদান পেলাম একটি কলের লাঙ্গল। সার্থক জীবনের আশ্রয় খুঁজে পেলাম। এবার চাষাবাদে মনোযোগ দিই। এখন ধার কর্জ নেই। সংসারের খরচ বাদ দিয়ে অর্থ সঞ্চয় করি। সঞ্চয়কৃত অর্থ দিয়ে ছাগল পালন করছি। মৌসুমী চাষাবাদ বিকল্পে রিকশা চালাই। পরিবারকে দিয়ে ছাগল লালন পালনে বাড়তি আয়, সবমিলিয়ে এখন জীবনমানের সময় নিদান যেন শান্ত পরিশীলিত।

সুস্থ হয়ে কামাল ফিরল কর্ম জীবনে
আমি মোহাম্মদ কামাল হোসেন , পিতাঃ মৃত আবদুল মালেক, মনোহরখালী, বড়ঘোপ, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার। পেশায় একজন শ্রমিক, চার মেয়ে-স্ত্রী ও মা সহ সাত জনের পরিবার। দিনের রোজগার দিয়ে দিনেই চলি, কাজ নাই তো পেটে ভাত নাই। এই হল আমার অবস্থা।
বছর তিনেক থেকে মেরুদন্ডে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভুত হলে শহরে হাসপাতালে ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। ডাক্তার সাহেব বলেন মেরুদন্ড ফাঁক হয়ে গেছে, অপারেশন করতে হবে, লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন, বড় অপারেশন। এত টাকা জোগাড় কারা তো দুরের কথা স্বপ্নেও দেখি নাই। আস্তে আস্তে কর্মঅক্ষম হয়ে পড়ি। মানুষজন কিছু দান করলে খাই না হয় পরিবার নিয়ে ওপুষ থাকি।
২০১৯ সালের আগষ্ট মাসের প্রথম দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল মান্নান চৌধুরীর পরামর্শে চট্টগ্রাম মেড়িকেল কলেজ হাসপাতালের ২৮ নং ওয়ার্ডের ৪৭/এ সিটে ভর্তি হই এবং তাহার মাধ্যমে শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্টে সহায়তার জন্য আবেদন করলে আমার অপারেশনের যাবতীয় ওষুধ ও খরচের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করলে ঐ বছর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সফলভাবে আমার অপারেশন সম্পন্ন হয়। বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক বেশি সুস্থতা বোধ করছি, আশা রাখি আল্লাহর রহমতে আবার কর্ম জীবনে ফিরে যেতে পারব। আমি যাদের কেউ না তারা যে আমাকে এত টাকা দিয়ে সহায়তা করল তাদের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া ছাড়া আর কিছু করার মত আমার যে সামর্থ্য নাই।

ভাত আর মোটা কাপড়ের ব্যবস্থা করতে পারছি
আমি মোছাম্মৎ রুবি আকতার, স্বামী: আবদুল হক, সাদিকপাড়া, সাতবাড়িয়া, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম।। সংসারের অভাব যেন থামছেই না। কাজ করার উদ্যেগ আছে, সাহস আছে কিন্তু উৎস নেই।
শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট পরিচালিত দারিদ্র বিমোচন প্রকল্প যাকাত তহবিল থেকে আমার স্বামীকে ৪০ হাজার টাকা অনুদান দিলে তা থেকে প্রথমে ২০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গোয়াল ঘর নির্মাণ করি এবং ১৯ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু ক্রয় করি। ২ মাস পরে এটি ২৫ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রি করে দিয়েছি। পরে ২০ হাজার টাকা দিয়ে আরো একটি গরু ক্রয় করেছি। যেটি এখন বাজার মূল্য ৫০ হাজার টাকা।
এ কাজে আমার সাহস ও শারিরীক শক্তি সঞ্চারিত হয়েছে বহুগুণে। সময় ভাল কাটছে, শরীর ভাল আছে। তাই আরো সুবিধা নিয়ে আমি পরিবারের দু’মুটো ভাত আর মোটা কাপড়ের ব্যবস্থা করতে পারছি।