একটি সুষম ও স্থায়িত্বশীল আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ অপরিহার্য। দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। বিপুলসংখ্যক নারী বেকার অথবা সাংসারিক কাজে আবদ্ধ। উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করে নারীদের সম্ভাবনা ও কর্মদক্ষতাকে উৎপাদনমুখী কাজে লাগাতে কারিগরি প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। এ ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীর দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা, ও শ্রমবাজারে ব্যাপক অংশগ্রহণ করতে পারলে নারীর উন্নয়ন সম্ভব।
শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ট্রাস্ট পরিচালিত দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প এর ব্যবস্থাপনায় “দক্ষ নারী উন্নয়ন কর্মসুচি”র আওতায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৫৯ টি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এ সব কেন্দ্র থেকে এ পর্যন্ত ২,০০০ জন সেলাই কাজে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।

বি-বাড়িয়া জেলার সরাইল থানার অরুয়াইল এলাকার পাকশিমুল গ্রামের উত্তর শাখা থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ওই এলাকার উজ্জ্বল মিয়ার স্ত্রী রুমা বেগম বলেন, সংসারে দারিদ্রতার কারণে খুব কষ্টে দিন কাটছিল আমাদের। আমাদের দারিদ্রতার কথা হযরত জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী ট্রাস্টের লোকজন জানার পর গ্রামের অন্যান্য নারীদের মতো আমাকেও তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষার্থী হিসেবে মনোনীত করেন। সেখানে সেলাই কাজে প্রশিক্ষণ নিয়েছি, একটি সেলাই মেশিনও পেয়েছি। এই সেলাই মেশিন দিয়ে কাজ করে এখন আমার সংসারে অনেকটা দারিদ্রতা দূর হয়েছে। আমি নিজেও এখন গ্রামের মেয়েদের কাজ শিখিয়ে বাড়তি উপার্জন করছি। আমার নিজের কেন্দ্রে এখন ১০ জন নারীকে কাজে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।

মোছাম্মৎ কাউসার বিবি (২৫) এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন ২০০৫ সালে। বাবা ইদ্রিস মিয়া। বোয়ালখালী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার । বর্ত মানে মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ, চাঁন্দগাও শাখার সভাপতির দায়িত্বে আছেন। ইদ্রিস মিয়া মেয়েকে বিয়ে দেন হাটহাজারী ফতেয়াবাদ এলাকায়। দুই বছর যেতে না যেতেই রমজানের সময় হঠাৎ মেয়ের স্বামী মারা যায়। একটি শিশু সন্তান (নাতনি) সহ কাউচার বিবি চলে আসেন বাপের বাড়ীতে। চলমান জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। একটি মেয়ে সন্তান নিয়ে বাপের সংসারে বোঝা হয়ে গেলো “কাউসার বিবি”। কিন্তু এখন তিনি স্বাবলম্বী। কিভাবে জানতে চাইলে তিনি (কাউসার বিবি) বলেন, স্বামী মারা যাবার পর দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প যাকাত তহবিল থেকে আমাকে ৪০ হাজার টাকা সহায়তা হিসাবে প্রদান করেন। আমি তা দিয়ে সেলাই মেশিন ও কাপড় কিনে বাবার ঘরেই কাজ করতে থাকি। এতে আমার মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এখন আমি পিতৃহারা সন্তানের একটি সুন্দর জীবনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে সাহস পাচ্ছি। মেয়ে মায়েশা (৪) কে চান্দগাঁও সিটি ল্যাব কিন্ডারগাডেন স্কুল-এ কে.জি তে ভর্তি করেছি। নিয়মিত স্কুলে আসা-যাওয়া করে। হ্যাঁ! আমার উদ্দ্যোগ ও কাজের পরিধি দেখে দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তাগণ আমার মাধ্যমে এ মাসেই একটি সেলাই প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। আল্লাহ্ রহমতে আপনাদের দোয়ায় অনেক দুর এগিয়ে যেতে পারব-ইনশাআল্লাহ














