রাউজানের নোয়াজিষপুরে সেলাই প্রশিক্ষণার্থীদের সনদ বিতরণ ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
মানবসেবার মহৎ অঙ্গীকারকে ধারণ করে শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্ট বহু বছর ধরে নীরবে, আন্তরিকতায় ও মমতায় কাজ করে যাচ্ছে মানুষের কল্যাণে। সেই আদর্শ বুকে ধারণ করে যাকাত ওয়েলফেয়ার ফান্ডের ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াজিষপুরে প্রতিষ্ঠিত শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী প্রশিক্ষণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের নতুন জীবনের দিশারী।
এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ৮ম ব্যাচের সেলাই প্রশিক্ষণার্থীদের সনদপত্র বিতরণ এবং ৯ম ব্যাচের ফাইনাল পরীক্ষা—দুটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন যথাযথ মর্যাদা ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে।
সনদ বিতরণের অনাবিল আনন্দ -সেদিন সকালেই প্রশিক্ষণকেন্দ্রের প্রাঙ্গণে এক বিশেষ আবহ সৃষ্টি হয়। সাদামাটা সাজসজ্জা, আশাব্যঞ্জক মুখ আর নতুন স্বপ্নে উজ্জ্বল চোখ—সব মিলিয়ে যেন এক মানবিক উপলক্ষের চিত্রপট আঁকা হয়ে ওঠে। ৮ম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীরা তিন মাসব্যাপী সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে যখন সনদপত্র গ্রহণের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ালেন, তখন তাদের চোখেমুখে ফুটে উঠেছিল আত্মবিশ্বাসের দীপ্ত আলো।
সনদ গ্রহণের মুহূর্তটি কেবল একটি কাগুজে স্বীকৃতি নয়—এটি ছিল তাদের দীর্ঘ চেষ্টা, অধ্যবসায় ও শেখার প্রতি নিষ্ঠার এক সুন্দর প্রতিদান। অনেক প্রশিক্ষণার্থীর হাতে থাকা সনদ যেন তাদের ভবিষ্যতের নতুন পথচলার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। বক্তারা তাদের উৎসাহিত করে বলেন, এই দক্ষতা নারীদের স্বনির্ভরতার দ্বার উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
৯ম ব্যাচের ফাইনাল পরীক্ষা—দক্ষতার দৃশ্যমান প্রয়াস– একই দিনে অনুষ্ঠিত হয় ৯ম ব্যাচের ফাইনাল পরীক্ষা। পরীক্ষার সময় প্রশিক্ষণার্থীরা যে মনোযোগ, আন্তরিকতা এবং দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন, তা প্রশিক্ষকদের মনে গভীর তৃপ্তি এনে দেয়। সেলাই মেশিনের শব্দ আর হাতে-কলমে কাজের ধ্বনি মিলিয়ে যেন কর্মময়তার এক সুর বেজে ওঠে পুরো কেন্দ্রে।
পরীক্ষার্থীদের কাজে ফুটে উঠেছিল তাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা—কাটিং, প্যাটার্ন তৈরি, সেলাই এবং পোশাক নির্মাণের প্রতিটি ধাপে ছিল তাদের নৈপুণ্যের পরিচয়। প্রশিক্ষকরা আশা প্রকাশ করেন, এ ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও আগামী দিনগুলোতে সমাজে স্বাবলম্বী ও দক্ষ নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবেন।
নারী উন্নয়নে প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ভূমিকা– প্রশিক্ষণকেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় নারীদের কর্মমুখী শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। যাকাত ওয়েলফেয়ার ফান্ডের সহায়তায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীরা ঘরে বসেই আয় করার সুযোগ পাচ্ছেন। অনেকেই ইতোমধ্যে ছোট উদ্যোগ শুরু করেছেন, আবার কেউ কেউ বৃহত্তর পরিসরে কাজের স্বপ্ন দেখছেন। এ উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
উপসংহার-রাউজানের নোয়াজিষপুরের এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যেন নারীদের আশার আলো জ্বালানোর এক নীরব প্রদীপ। ৮ম ব্যাচের সনদ বিতরণ ও ৯ম ব্যাচের ফাইনাল পরীক্ষা শুধু একটি আনুষ্ঠানিক আয়োজন নয়—এটি নারীদের আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম ও স্বপ্নযাত্রার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। শাহানশাহ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্টের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও যাকাত ওয়েলফেয়ার ফান্ডের সহযোগিতায় নারীর ক্ষমতায়নের এ প্রয়াস ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হোক—এ প্রত্যাশায় অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন আকতার হোসেন, মনজুরুল ইসলাম চৌধুরী, আহসান উল্লাহ চৌধুরী বিভন, কাজী হেলাল উদ্দীন, সৈয়দ মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন ও মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দীন বাবলু প্রমুখ।

